নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আগৈলঝাড়ায় প্রকল্পের কাজের বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে এক এনজিও নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে। এঘটনায় আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী চেমফ সংস্থার নির্বাহী পরিচালকের ভাই নগেন্দ্র নাথ হালদার ও তার আত্মীয় কল্লোল বিশ্বাস। লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে বাংলাদেশ আর্সেনিক মেটিগেশন ওয়াটার সাপ্লাই (বিএএমডব্লিউএসপি) এর ৩ বছর মেয়াদী প্রজেক্টের অধীন প্যাকেজ নং ১/সি এর অর্ন্তভূক্ত মাদারীপুর, কালকিনি, মুলাদী ও মেহেন্দীগঞ্জ এই ৪টি উপজেলায় আর্সেনিক জরিপ কর্মসূচী যৌথ ভাবে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের আলোশিখা রাজিহার সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র ও চেমফ নামে দুটি বেসরকারী সংস্থা ৯৬ লক্ষ ৯৩ হাজার ৪শত ৮০ টাকার কাজ সম্পন্ন করে। প্রকল্পের লিড অর্গানাইজেশন সংস্থা আলোশিখা রাজিহার সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র ও এসোসিয়েটস পার্টনার চেমফ সংস্থা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। উপরোক্ত সংস্থা দু’টির মধ্যে ২০০২ সালের ১৬ মে প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তিপত্র হয় এবং ২০০৪ ২৫ অক্টোবর প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। প্রকল্পের লিড অর্গানাইজেশন সংস্থা আলোশিখা রাজিহার সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মুকুল হালদার ২০০১ সালের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ আর্সেনিক মেটিগেশন ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট এর স্ক্রিনিং কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এবং মেটিগেশন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সকল প্রকার প্রতিনিধিত্ব ও আর্থিক লেনদেনের জন্য আলোশিখা রাজিহার সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের পক্ষে ওই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জেমস মৃদুল হালদারকে ক্ষমতা প্রদান করে প্রকল্প পরিচালক আবদুল কাদের চৌধুরী’র বরাবর আলোশিখা রাজিহার সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের নিজস্ব প্যাডে একটি লিখিত প্রদান করেন। প্রকল্পের লিড অর্গানাইজেশন সংস্থা আলোশিখা রাজিহার সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক জেমস মৃদুল হালদার, এসোসিয়েটস পার্টনার চেমফ সংস্থার পক্ষে নির্বাহী পরিচালক সবুজ বরণ হালদার, টেকনিক্যাল পার্টনার হিসেবে ছিলেন মোঃ রফিকুল ইসলাম ও নুরুন নাহার বেগম। উক্ত প্রজক্টের কো-অডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নুরুন নাহার বেগম। আর্সেনিক প্রকল্পের লভ্যাংশের টাকা ২টি সংস্থা ও দুই জন টেকনিক্যাল পার্টনারের মধ্যে ২৫% সমহারে বন্টনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ওই প্রকল্পের আর্থিক লেনদেনের জন্য সোনালী ব্যাংক, ঢাকার ঝিগাতলা শাখায় ১৫২৬/৮ হিসাব নম্বরে একটি যৌথ ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলা হয়। ওই ব্যাংক হিসেবে আলোশিখা রাজিহার সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক জেমস মৃদুল হালদারকে প্রধান ব্যাংক সিগনেটরী ও বাকী ৩ জনের মধ্যে যে কোন ২ জনের যৌথ স্মাক্ষরে আর্থিক লেনদেন পরিচালিত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ আর্সেনিক মেটিগেশন ওয়াটার সাপ্লাই (বিএএমডব্লিউএসপি) এর প্রজেক্টের মাধ্যমে ৯৬ লক্ষ টাকার প্রকল্প যৌথ ভাবে বেসরকারী সংস্থা চেমফকে নিয়ে করার কথা থাকলেও লিড অর্গানাইজেশন হিসেবে আলোশিখা রাজিহার সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র একা দায়িত্ব পালন করেন। আলোশিখা রাজিহার সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক জেমস মৃদুল হালদার লিড হিসেবে নিজে ও তার সাথে ২ জন টেকনিক্যাল পার্টনার মোঃ রফিকুল ইসলাম ও নুরুন নাহার বেগম এর যৌথ স্বাক্ষরিত চেকের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগে ও পরে এসোসিয়েটস পার্টনার চেমফ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সবুজ বরণ হালদারের অগোচরে ব্যাংকের সমস্ত টাকা আলোশিখা রাজিহার সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক জেমস মৃদুল হালদার প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেন। ওই প্রকল্পের উত্তোলনকৃত টাকা আলোশিখা রাজিহার সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক জেমস মৃদুল হালদার, তার দুই টেকনিক্যাল পার্টনার মোঃ রফিকুল ইসলাম ও নুরুন নাহার বেগম ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। চুক্তি মোতাবেক ওই প্রকল্পের মূল টাকার ২৫% ১৮ লক্ষ ৪২ হাজার বকেয়া পাওনা টাকা চেয়ে নির্বাহী পরিচালক জেমস মৃদুল হালদারের কাছে একটি নোটিশ প্রেরণ করে এসোসিয়েটস পার্টনার চেমফ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সবুজ বরণ হালদার। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ডাকযোগে রেজিষ্ট্রিকৃত নোটিশের মাধ্যমে পাওনা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন সবুজ বরণ হালদার। কিন্তু ওই প্রকল্পের টাকা না দিয়ে আলোশিখা ঋণদান কর্মসূচীতে অর্ন্তভুক্ত করায় সংস্থার সংবিধান অনুযায়ী গচ্ছিত চেমফ সংস্থার পাওনা ২% সরল সুদে চক্রবৃদ্ধি হারে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে পাওনা টাকার পরিমান দাড়ায় ৪ কোটি ৬৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৯ শত ৮৫ টাকা। এরই ধারাবাহিকতায় পাওনা টাকা চেয়ে আলোশিখার নির্বাহী পরিচালক জেমস মৃদুল হালদারকে নোটিশ প্রদান করায় নোটিশদাতা চেমফ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সবুজ বরণ হালদার ও তার ভাই নগেন্দ্র নাথ হালদারকে আসামী করে আগৈলঝাড়া থানায় সিআর ০৫/২০১৯, এমপি ৩৩/ ২০২০ ও এমপি ১৪/২০২১ ৩টি মামলা দায়ের করেন আলোশিখার অফিস পিয়ন খোকন সরকার। প্রথম মামলাটি সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিকেশন (পিবিআই) তদন্ত পূর্বক অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি এবং ২য় মামলাটি আদালত কর্তৃক বাদীকে অব্যহতি প্রদান পূর্বক মামলা নিষ্পতি হয়। ইতিমধ্যে চেমফ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সবুজ বরণ হালদার ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট মৃত্যু বরণ করলে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারী মৃত সবুজ বরণ হালদারের ভাই নগেন্দ্র নাথ হালদার ও তার (সবুজের) আত্মীয় কল্লোল বিশ্বাসকে আসামী করে বরিশাল আদালতে ৩য় মামলা দায়ের করেন। যার নং এমপি ১৪/২০২১। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। এর আগে বেসরকারী সংস্থা চেমফ এর নির্বাহী পরিচালক সবুজ বরণ হালদার বাদী হয়ে ৪ কোটি ৬৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৯ শত ৮৫ টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী আলোশিখা সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মৃদুল হালদার, আলোশিখা সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের তৎকালীন কমিটির ২৪ জনকে আসামী করে ঢাকা আদালতে মামলা দায়ের করেন। যার নং সিআর-১৭২/২০২০। মামলাটি তদন্তের জন্য ২০২০ সালের ১ এপ্রিল ডিবিতে প্রেরন করা হয়। এ ঘটনায় চেমফ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মৃত সবুজ বরন হারদারের ভাই নগেন্দ্র নাথ হালদার জানান, আলোশিখা সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মৃদুল হালদার প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। যারই ধারাবাহিকতায় আর্সেনিক প্রকল্পের চেমফ সংস্থার পাওনা টাকা না দিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করে এবং আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। এ ব্যপারে অভিযুক্ত আলোশিখা সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মৃদুল হালদার অর্থ অত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই আর্সেনিক প্রকল্পটি ২০০২ সালে লিড অর্গানাইজেশন সংস্থা হিসেবে আলোশিখা রাজিহার সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র, এসোসিয়েটস পার্টনার চেমফ সংস্থা এবং টেকনিক্যাল পার্টনার হিসেবে মোঃ রফিকুল ইসলাম ও নুরুন নাহার বেগমসহ ৪ জন মিলে প্রকল্পের কাজ শুরু করি। প্রকল্পের কাজ চলাকালিন আমি ব্যাংক হতে একটি চেকের মাধ্যমে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করি। এই টাকার মধ্যে আমি মাত্র ৬ লক্ষ গ্রহণ করি। প্রকল্পের কাজ শুরুর ৫ থেকে ৬ মাস পরে আমি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে ১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভর্তি থাকি। এর পর ওই প্রকল্পের কাজ থেকে আমি (লিড অর্গানাইজার জেমস মৃদুল হালদার) অব্যহতি নেই। এরপর ২০১৭ সাল থেকে চেমফ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সবুজ বরণ হালদার টাকা চেয়ে লেথা-লেখি শুরু করে। সে আমার কাছে ১৮ লক্ষ টাকা পায় এবং সেটা সুদ আসল দিয়ে ৪ কোটি টাকা বানায়। এটা একটা মিথ্যা প্রতারণা, পরে আমি তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী মামলা করি। যেহেতু একটা মিথ্যা জিনিষ নিয়ে ১৪-১৫ বছর পরে আমার সাথে প্রত্যারণা শুরু করে। বর্তমানে আমার বিরুদ্ধে যে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে তা মিথ্যা ও ভুয়া। এটার কোন সত্যতা নাই। আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেম লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন, আমি অভিযোগটি পেয়েছি। পরবর্তীতে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply